এদারা পরিচিতি

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

حامدا ومصليا ومسلما، أما بعد

প্রতিষ্ঠা প্রেক্ষাপট

পবিত্র মক্কানগরীর হেরা গুহা থেকে সুচনা হয় ইসলামী শিক্ষার ধারা। ওখানে ফেরেশতার মাধ্যমে আল্লাহপাক তার প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআন শিক্ষা দিলেন এবং পরবর্তীতে স্বয়ং শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা. নব্য মুসলিমদের শিক্ষা দিতে শুরু করলেন। তিনি বলেছেন, আমাকে শিক্ষক করে প্রেরণ করা হয়েছে। মক্কার জীবনে অত্যন্ত প্রতিকুল পরিবেশে প্রায় ১৩টি কেন্দ্রে ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। মদীনায় হিজরত করে আসার পর মসজিদে নববীর সুফ্ফা নামক স্থানে ইসলামী শিক্ষার মূলকেন্দ্র স্থাপন করেন। এ পবিত্র স্থান থেকে বিশ্বজুড়ে ইসলামী শিক্ষার শ্রোতধারা ছড়িয়ে পড়ে। খুলাফায়ে রাশিদীনের প্রথম যুগ থেকে তুর্কী খেলাফতের শেষ আমল পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে ইসলামী শিক্ষাই ছিল একমাত্র শিক্ষাব্যবস্থা এ শিক্ষায় শিক্ষিতরা-ই ছিল গুণী ও আদর্শবান।

কবির ভাষায়

ভূগোল ও খগোল জ্যোতিষ শাস্ত্রকরিলা যাহারা জগতে দান,বীজ গণিতের জনক যাহারাসৃজিলা যাহার ত্রিকোণ ও মানসেজাতি আমরা তুচ্ছ নাহিকোবিশ্ব পুজ্য মুসলমান

১৩০০ ঈসায়ী সনের প্রথম দিকে সুলতান কুতবুদ্দীন আইবেকের শাসনামলে ভারত উপমহাদেশে কওমী মাদরাসা শিক্ষার সূচনা হয়। মুলতানের গভর্নর নাসির উদ্দীন কুবাচাহ মুলতানের উচ্ছ নামক স্থানে মাদরাসায়ে ফিরোজী নামে একটি কওমী মাদরাসা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে সমগ্র ভাতরবর্ষে স্থানে স্থানে অসংখ্য অগণিত কওমি মাদরাসা স্থাপন করা হয়। ঐতিহাসিক সত্য, বৃটিশ শাসনামলের পূর্বে কেবল বাংলার ভূখণ্ডে ৮০,০০০ (আশি হাজার) কওমি মাদরাসা ছিল।ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার জ্যোতির্ময় সূর্য অস্তমিত হওয়ায় সমগ্র ভারতবর্ষে বৃটিশ বেনিয়াদের আধিপত্য কায়েম হয়। ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষা-দীক্ষার ক্ষেত্রে উপমহাদেশের মুসলিম সমাজ প্রায় পঙ্গু হয়ে পড়ে। ইংরেজ সরকার ষড়যন্ত্র করে গোটা উপমহাদেশের মসজিদ, মাদরাসা ও খানকাহ সমূহের তাবৎ ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। ফলে এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবার উপক্রম হয়।১৮৫৭ সালে ইংরেজবিরোধী যুদ্ধে শামেলীর ময়দানে আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখের এক সাগর রক্তবন্যা ভাসিয়ে দেয়ার পর তৎকালীন দুরদৃষ্টি ও অর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্ন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমগণ ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ নামক স্থানে ১৮৬৬ সালে দারুল উলূম দেওবন্দ নামে একটি কওমী মাদরাসা স্থাপন করেন। উক্ত দেওবন্দ মাদরাসাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীকালে উপমহাদেশ, ইউরুপ, আমেরিকা ও আফ্রিকা তথা বিশ্বেজুড়ে স্থাপিত হয় অসংখ্য ছোট-বড় মাদরাসা।এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটবাসীর নিরলস প্রচেষ্ঠায় কুতবুল আলম শায়খুল ইসলাম আল্লামা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. ১৯২৩ ইং সনে সিলেট আগমন করলে, তৎকালীন উলামাদের সংগঠন আঞ্জুমানে ইসলামিয়ার উদ্যোগে সিলেটের নয়াসড়কস্থ খেলাফত বিল্ডিং নামে পরিচিত ওয়াকফকৃত ভুমিতে দারুল হাদীস মারকাযিয়া মাদরাসা স্থাপন করা হয়। শায়খুল ইসলাম হযরত মাদানী রাহ. উক্ত মাদরাসায় প্রায় ৬ বৎসরকাল হাদীসে নববীর শিক্ষাদান করেন।এসময় যেহেতু সিলেট আসাম প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত ছিল, তাই তিনি সিলেটসহ আসাম প্রদেশের সমস্ত কওমি মাদরাসাকে একই নেসাব ও নেযামের আওতাধীন করে দারুল হাদীস মারকাযিয়ার নিয়ন্ত্রাধীন করার প্রচেষ্ঠা চালাতে আরম্ভ করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি একটি শিক্ষা ক্যারিকুলাম বা নেসাবনামা প্রণয়ন করেন। যা আজ ও ‘‘নেছাবে মাদানী” নামে মুদ্রিত ও সুপরিচিত। জাগতিক ও ধর্মীয় সিলেবাসের যথাযোগ্য সমন্বয় রয়েছে মাদানী নেসাবে। সাথে সাথে উক্ত নেসাবে প্রচুর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মাতৃভাষাকে। হযরত মাদানী রাহ. এর এ যুগান্তরকারি পরিকল্পনা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা অবস্থায় দারুল উলূম দেওবন্দের তৎকালীন সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেওবন্দ মাদরাসার মজলিসে শুরার জোর তাগিদের কারণে ১৯২৮ ইং সনে সিলেট ত্যাগ করে দারুল উলূম দেওবন্দ যেতে বাধ্য হন। যার ফলশ্র“তিতে আসাম প্রদেশের মাদরাসাগুলোকে একক পরিচালনাধীন করা সম্ভব হয়নি।হযরত মাদানী রাহ. দেওবন্দ চলে যাবার পর তার এ যুগান্তরকারী প্রোগ্রামকে বাস্তবায়িত করার উদগ্র বসনা যার অন্তরে পীড়া দিচ্ছিল তিনি হলেন বালাগঞ্জ উপজেলার বর্তমান ওসমানী নগর থানাস্থিত গাভুরটেকি গ্রামের জমিদার পরিবারের সন্তান মরহুম ডা. মুর্তযা চৌধুরী। তৎকালীন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ও কংগ্রেসের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় নিখিল ভারত নেতৃস্থানীয় আলেম-উলামা বিশেষভাবে শায়খুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. এর দীর্ঘ সান্নিধ্য লাভের সুযোগ তার ভাগ্যে জোটে। যদিও তিনি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। উপরন্ত, সিলেট তথা ভারতবর্ষেও প্রথিতযশা আলেম-উলামা এবং শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদদের সাহচর্য লাভ করায় ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষার প্রভুত উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে তিনি ছিলেন উৎসর্গপ্রাণ মহামনীষী।তাইতো শিক্ষা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখায় বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ তাঁকে “কর্মবীর” অভিধায় অভিষিক্ত করেন। হযরত মাদানী রাহ. এর পরিকল্পনা অনুযায়ী আসাম প্রদেশের কওমি মাদরাসাসমুহকে একই সূত্রে গ্রথিত করার বাস্তব প্রয়াস নিয়ে জনাব ডাক্তার সাহেব বিভিন্ন স্তরের আলেম-উলামা ও ধর্মীয় শিক্ষাবিদদের সাথে প্রচুর মত বিনিয়ম করেন। অবশেষে তার জান্নাতবাসিনী পূণ্যবতি মাতার ইছালে ছোয়াব উপলক্ষ্যে ১৯৪১ইং ১৬ই মার্চ তারিখে গাভুরটেকিস্থ নিজ বাড়ীতে সিলেটের শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামাগণকে দাওয়াত করে এক দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করেন।দোয়া শেষে উপস্থিত উলামায়ে কেরামের সামনে হযরত মাদানী রাহ. এর বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে কওমি মাদরাসা সমুহকে নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হবার কথা সবিস্তারে বর্ণনা করে বর্তমানে এর বিকল্প হিসাবে একটি কওমিী মাদরাসা বোর্ড স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করেন। জনাব ডা. মুর্তযা চৌধুরী সাহেবের উদ্দেশ্য বুঝে সমবেত উলামায়ে কেরাম হযরত মাওলানা ছহুল উসমানী ভাগলপুরীকে সভাপতি করে তাৎক্ষনিক বৈঠক বসেন।বৈঠকে কওমি মাদরাসাসমূহের বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনার পর “আযাদ দ্বীনী তা’লীমী এদারা” নামে একটি বোর্ড স্থাপনের পক্ষে সবাই সম্মত হন। অবশ্য পরে ১৯৬২ ইং সনে এ বোর্ডের নাম ইষৎ পরিবর্তন করে “আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম” করা হয়। উক্ত বৈঠকে মাওলানা আব্দুল হক চৌধুরী মুক্তারপূরীকে বোর্ডের সভাপতি এবং তৎকালীন আসাম প্রদেশ আইনসভার সদস্য মাওলানা ইব্রাহীম চতুলীকে বোর্ডের নাযিম বা সেক্রেটারী এবং কর্মবীর ডা. মুর্তযা চৌধুরী গাভুরটেকিকে অর্গেনাইজার বা সংগঠক নিযুক্ত করা হয়।

ইতিহাস

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের ফলে অধিকাংশ মাদরাসা ভারতে পড়ে যাওয়ায় এগুলো বোর্ড হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সাময়িকভাবে বোর্ডের কার্যক্রম স্থিমিত হয়ে পড়ে। এসময় বোর্ডের কর্মকর্তাবৃন্দ আবার নতুন করে বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনার উপায় উদ্ভাবন করতে মনোনিবেশ করেন। দেশ বিভাগের পর বিপর্যস্ত পরিস্থিতিকে সামাল দিতে ১ম অধিবেশনে বসেন ঢাকা উত্তর রানাপিং মাদরাসায়, তারপর ২য় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় গোলাপগঞ্জের রণকেলীগ্রামে। দুটি অধিবেশন করার পরও আশানুরূপ ফলোদয় না হওয়ায় এদারাকে পুণরুজ্জীবিত করার ব্যাপারে সবাই হতোদ্যম হয়ে পড়লেন। এদিকে অতিক্রান্ত হয়ে গেল দেশ বিভক্ত হওয়ার চার বছর। এদারার কার্যক্রম আবার শুরু করা যাচ্ছেনা। এহন অবস্থায় বেদনাভরা অন্তরে এদারার অর্গেনাইজার জনাব ডা. মুর্তযা চৌধুরী ১৯৫১ ইং মোতাবেক ১৩৭২ হিজরি মুহররম মাসে সুদূর দেওবন্দের উদেশ্যে রওয়ানা দিলেন। কুতবে আলম শায়খুল ইসলাম হযরত মাদানী রাহ. এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বোর্ডের দুর্যোগপূর্ণ সার্বিক অবস্থা সম্বন্ধে অবহিত করে ১৩৭২ হি. ১৭ই মুহররম তারিখে হযরতের নিকট হতে স্বহস্তে লিখা একখানা পত্র তারই প্রিয় শিষ্য হযরত মাওলানা লুৎফুর শায়খে বর্ণভী রাহ. ও হযরত মাওলানা বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রাহ. এর নামে নিয়ে আসেন। এ পত্রে তিনি উল্লেখিত উভয় বুজুর্গসহ সিলেটের আলেম-উলামা ও মাদরাসাসমূহের দায়িত্বশীলদের প্রতি সম্মিলিত শক্তি অর্জনের লক্ষ্যে এদারার কাজকে বেগবান করার নির্দেশ প্রদান করেন। জনাব ডা. মুর্তযা চৌধুরী রাহ. দেওবন্দ হতে কুতবুল আলমের লিপি নিয়ে সিলেট পৌঁছে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও অক্লান্ত পরিশ্রম করে এদারাকে সুসংহত করার লক্ষ্য নিয়ে আলেমদের খেদমতে বারবার উপস্থিত হয়ে সংঘবদ্ধ করার প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেন।
পরিশেষে, হযরত মাওানা হাফিজ আব্দুল করীম শায়খে কৌড়িয়া রাহ. হযরত মাওলানা রিয়াছত আলী শায়খে চৌঘরী রাহ. এবং হযরত মাওলানা বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা রাহ. এর যৌথউদ্যোগে সিলেট বিভাগের বিশিষ্ট আলেমগণ ও মাদরাসা সমূহের উস্তাদবৃন্ধকে সমবেত হবার আহবান করে সিলেট জেলার রেঙ্গা অঞ্চলের গুরুণ্ডা গ্রওামে মাওলানা মুকররম আলী রাহ. ও মাওলানা সিকন্দর আলী রাহ. দ্বয়ের বাড়ীতে এদারার অধিবেশন বসে। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন রানাপিং মাদরাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা রিয়াছত আলী শায়খে চৌঘরী রাহ.। উক্ত যুগান্তরকারী. প্রাণবন্ত অধিবেশনে ৪বছর যাবৎ স্থগিত বোর্ডকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে সজীব ও সচল করত: নব উদ্যমে বোর্ডের কর্মতৎপরতা বেগবান করার অঙ্গীকার নেয়া হয়। সেমতে হযরত মাওলানা হাফিজ আব্দুল করীম শায়খে কৌড়িয়া রাহ. কে এদারা সদর বা সভাপতি এবং হযরত মাওলানা রিয়াছত আলী শায়খে চৌঘরী রাহ. কে নাইবে ছদর বা সহসভাপতি মনোনীত করা হয়। এ অধিবেশনে এদারার যথারিতি নাযিম সেক্রটারী হিসাবে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি বরং কর্মবীর ডা. মুর্তযা চৌধুরী রাহ. কে অর্গেনাইজার বা সংগঠক পদে বহাল রেখে সেক্রেটারীর যাবতীয় দায়িত্ব সম্পাদন করতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদারার প্রথম সভাপতি হযরত মাওলানা আব্দুল হক মুক্তারপুরী রাহ. ছিলেন। দেশ বিভাগের পূর্বাপর সামান্য কিছুদিন নির্দিষ্ট কোন সভাপতি না থাকায় ১৯৫২ ইংরেজি সনে হযরত মাওলানা আব্দুল করীম শায়খে কৌড়িয়া রাহ. সদর মনোনিত করার পর থেকে ১২/১১/২০০১ ঈসায়ী মুতাবিক ২৫/০৮/১৪২২ হিজরি রোজ সোমবার ইন্তেকাল করার আগ পর্যন্ত ৫৩ বছর তিনি সভাপতির আসনে সমাসিন থাকেন। তিনি সভাপতি থাকাকালে নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন মেয়াদে সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
১. হযরত মাওলানা আব্দুল হক শায়খে গাজিনগরী রাহ.
২. হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আলী শায়খে বলরামপুরী রাহ.
৩. হযরত মাওলানা আকবর আলী রাহ. মুহতামিম, দরগাহ মাদরাসা
৪. হযরত মাওলানা ফখরুদ্দীন শায়খে গলমুকাপনী রাহ.
হযরত শায়খে কৌড়িয়া অসুস্থ ও বার্ধক্যজনিত কারণে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় মাওলানা আব্দুল হক শায়খে গাজীনগরীকে ২৯/১০/১৪২১ মোতাবিক ২৫/০১/২০০১ ঈসায়ী তারিখে নির্বাহি সভাপতি মনোনীত করা হয়। কিন্তু হযরত শায়খে গাজীনগরী হার্টের রোগী হয়ে যাওয়ায় ২৫/০২/১৪২২ হিজরি মোতাবেক ১৯/০৫/২০০১ ঈসায়ী তারিখে মাওলানা ফখরুদ্দীন শায়খে গলমুকাপনীকে নির্বাহী সভাপতি মনোনীত করা হয়। ৮ই রবিউল আউয়াল ১৪২৮ হিজরি মোতাবেক ২৯শে মার্চ ২০০৭ ইং তারিখে হযরত শায়খে কৌড়িয়া ইন্তেকাল করায় শায়খে গলমুকাপনীকে সভাপতি নির্বাচন করা হয়। ২৯/০৩/১৪২৫ হিজরি মোতাবেক ২০/০৫/২০০৪ ঈসায়ী তারিখে সহ-সভাপতি নির্বাচন করা হয়। হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান সাহেব শায়খে পাগলাকে। ০২/০২/১৪২৬ হিজরি মোতাবেক ১৩/০৩/২০০৫ ঈসায়ী তারিখে হয়রত শায়খে পাগলাকে নির্বাহী সভাপতি মনোনীত করা হয়। ৮/৪/১৪২৮ হিজরি মোতাবেক ২৯/০৩/২০০৭ ঈসায়ী তারিখে হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ বারকুটিকে ৫ বৎসরের জন্য সভাপতি নিবাচন করা হয়। জনাব ডা. সাহেব বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেলে তারপর নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ একের পর এক নাযিমের দায়িত্বে আসেন। তাদের সঠিক দায়িত্বকাল লিখিত না থাকায় এবং তৎকালীন কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উল্লেখ করা যায়নি।
১. হযরত মাওলানা আব্দুল আজীজ রাহ. বাঘা মাদরাসা, গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
২. হযরত মাওলানা হিলাল আহমদ সাহেব, ঘোষগাঁও, গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
৩. হযরত মাওলানা নূরুদ্দীন আহমদ রাহ. শায়খে গহরপুরী রাহ. বালাগঞ্জ, সিলেট।
৪. অতঃপর ৯ই রমাযান ১৩৯২ হিজরি সনে হযরত মাওলানা শফীকুল হক শায়খে আকুনী রাহ. কে নাযিম/ সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। তিনি ৬ই শাওয়াল ১৩৯৩ হিজরি পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন।
৫. তারপর ৭ই শাওয়াল ১৩৯৩ হিজরি সনে এদারার নাযিম/ সাধারণ সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। হযরত মাওলানা শায়খ ফখরুদ্দীন রাহ. মুহতামিম, গলমুকাপন মাদরাসা। তিনি ২৯ সফর ১৪১৯ হিজরি পর্যন্ত প্রায় ২৬ বৎসর অত্যন্ত সফলতার সাথে আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ এর নাযিম তথা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। তারই সময়ে এদারার প্রভুত উন্নতি সাধন হয়।
বিগত ২৯ সফর ১৪১৯ হিজরি তারিখে মজলিসে আম বা সাধারণ সভায় হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ বারকুটি দা. বা. কে নাযিম এবং মাওলানা আব্দুল বাসিত বরকতপুরীকে সহকারী নাযিম নির্বাচন করা হয়। সহকারী নাযিম হিসাবে তিনি ২৯/০৩/১৪২৫ হি. পর্যন্ত দায়িত্ব আদায় করেন।
অতঃপর ২৯/০৩/১৪২৫ হি. তারিখের সাধারণ সভায় জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুরের শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান মাওলানা জিয়াউদ্দিন সাহেবকে সহকারি নাযিম নির্বাচন করা হয়।
হযরত মাওলান হুসাইন আহমদ বারকুটি দা. বা. ৮ই রবিউল আউয়াল ১৪২৮ হিজরি মোতাবেক ২৯শে মার্চ ২০০৭ ঈসায়ী পর্যন্ত মোট ৯ বৎসর কাল নাযিমে উমূমীর দায়িত্ব সম্পাদন করেন। তারই দায়িত্বকালে বোর্ডের নিজস্ব ৫ তলা বিশিষ্ট এদারা ভবন নির্মাণ হয়। এছাড়া বোর্ডের উন্নয়নমূলক বিস্তর কার্যাদি সম্পাদিত হয়।
অতঃপর ৮ই রবিউল আউয়াল সন ১৪২৮হিজরি মোতাবেক ২৯ই শে মার্চ ২০০৭ইং তারিখে এদারার নির্বচনী সভায় হযরত মাওলানা শায়খ হুসাইন আহমদ বারকুটি দা. বা. কে ৫ বৎসরের জন্য সদর, হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান শায়খে পাগলাকে সিনিয়র নাইবে সদর এবং হযরত মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দীন সাহেবকে নাইবে সদর নিযুক্ত করা হয় এবং জনাব মাওলানা আব্দুল বাসিত বরকতপুরীকে নাযিমে উমূমী এবং হযরত মওলানা হাফিয মুহসিন সাবেহকে নাইবে নাযিমে উমূমী নির্বাচন করা হয়।
পরবর্তিতে ২৮শে শা’বান ১৪৩৩ হিজরি মোতাবেক ১৯শে জুলাই ২০১২ ইং তারিখে এদারার নির্বাচনী সভায় পুনরায় হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ বারকুটি দা. বা. কে ৫ বৎসরের জন্য সদর ও হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান শায়খে পাগলাকে সিনিয়র নাইবে সদর ও হযরত মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দীন সাহেবকে নাইবে সদর নিযুক্ত করা হয় এবং হযরত মাওলানা আব্দুল বাসিত বরকতপুরীকে নাযিমে উমূমী ও হযরত মাওলানা আব্দুল বছীর সুনামগঞ্জীকে নাইবে নাযিমে উমূমী নিযুক্ত করা হয়।
অতঃপর ১০ই রবিউসসানী ১৪৩৬হিজরি মোতাবেক ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ইং তারিখে এদারার নির্বাচনী সভায় পুনরায় হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ বারকুটি দা. বা. কে ৫ বৎসরের জন্য সদর, এবং হযরত মাওলানা আব্দুল হান্নান শায়খে পাগলা বিগত ১৫/০৯/২০১৪ ইং তারিখে ইন্তেকাল করায় অত্র কাউন্সিলে হযরত মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দীন সাহেবকে সিনিয়র নাইবে সদর ও হযরত মাওলানা মুফতি শফিকুল আহাদ সাহেবকে নাইবে সদর নিযুক্ত করা হয় এবং হযরত মাওলানা আব্দুল বাসিত বরকতপুরীকে নাযিমে উমূমী ও হযরত মাওলানা আব্দুল বছীর সুনামগঞ্জীকে নাইবে নাযিমে উমূমী নিযুক্ত করা হয়।
চলমান মেয়াদে হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ বারকুটি দা. বা. বার্ধক্যজনিত কারনে এবং হযরত মাওলানা আব্দুল বাসিত বরকতপুরী মারাত্মক অসুস্থতার কারনে উভয়ই শয্যাসায়ি হয়ে পড়েন ও কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এদারা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন তাঁদের সুস্থতার অপেক্ষা করেন। অবশেষে বোর্ডের গতিধারা রক্ষার্থে সংবিধানের ২৩ নং ধারা মোতাবেক বিগত ৭ই জুমাদাল উলা ১৪৩৮ হিজরি মোতাবেক ৫ ফেব্র“য়ারি ২০১৭ ইং তারিখে মজলিসে শুরার সিদ্ধান্তমতে হযরত মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দীন সাহেবকে ভারপ্রাপ্ত সদর ও হযরত মাওলানা আব্দুল বছীর সুনামগঞ্জীকে ভারপ্রাপ্ত নাযিমে উমূমী নিযুক্ত করা হয়।
অতঃপর বিগত ১৪৩৮ হিজরি সনে এদারার সংবিধান সংশোধন করে কর্মকর্তাগনের মেয়াদ ৫ বৎসরের স্থলে ৩ বৎসর করা হয় এবং সংশোধিত সংবিধানের আলোকে বিগত ২৭ রবিউসসানী ১৪৩৯ হিজরি মোতাবেক ১৫ই জানুয়ারি ২০১৮ইং ২রা মাঘ ১৪২৪ বাংলা তারিখে এদারার নির্বাচনী সভায় হযরত মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দীন সাহেবকে ৩ বৎসরের জন্য সদর, হযরত মাওলানা শায়খ মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীকে সিনিয়র নাইবে সদর ও হযরত মাওলানা মুফতি শফিকুল আহাদ সাহেবকে নাইবে সদর নিযুক্ত করা হয় এবং হযরত মাওলানা আব্দুল বছীর সুনামগঞ্জীকে নাযিমে উমূমী ও হযরত মাওলানা হাফিয মুহসিন আহমদ সাহেবকে নাইবে নাযিমে উমূমী নিযুক্ত করা হয়।
বর্তমানে উপরোল্লিখিত কর্মকর্তাগণ স্ব-স্ব-পদে অধিষ্ঠিত থেকে বোর্ডের যাবতীয় কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।

লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

১. প্রতিষ্ঠিত কওমি মাদরাসাসমূহকে একই নীতি ও নিয়মের অধীনে সুসংগঠিত করা।
২. বোর্ডভূক্ত মাদরাসাসমূহে এক নেসাব বা সিলেবাস চালু করা। আরবী ভাষাসহ প্রয়োজনীয় বাংলা, ইংরেজী ভাষা শিক্ষাদানের প্রতি আকৃষ্ট করা।
৩. যথাসম্ভব নতুন নতুন মাদরাসা, মক্তব ও হিফজখানা প্রতিষ্ঠা করা।
৪. স্তর অনুপাতে প্রত্যেক স্তরের শেষ পরীক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে গ্রহণ করা।
৫. বোর্ডভুক্ত মাদরাসাসমূহের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা।
৬. উত্তীর্ণ ছাত্রদেরকে সুন্নাতে নববীর আদর্শবান করতঃ উলুমে নববীর হেফাযত ও প্রচার প্রসার করা।

কাজকর্ম

সর্বপ্রথম ১১টি মাদরাসা এবং এসব মাদরাসার পক্ষ থেকে মনোনীত মোট ১৮ (আঠার) জন সদস্যকে নিয়ে “আযাদ দ্বীনী তা’লীমী এদারা” বোর্ডের শুভযাত্রা শুরু হয়। নিম্নে ১১টি মাদরাসা ও তাদের সদস্যদের নাম প্রদত্ব হলো। মাদরাসার নাম ও প্রত্যেক মাদরাসা হতে মনোনীত বোর্ড সদস্যদের নামঃ
১. রাণাপিং হুসাইনিয়া আরাবিয়া মাদরাসা, গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
(ক) শায়খুল হাদীস মাওলানা রিয়াসত আলী চৌঘরী রাহ.
(খ) হযরত মাওলানা সিরাজুল হক দাড়িপাতনী রাহ.
২. বাঘা গোলাপনগর আরাবিয়া মাদরাসা, গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
হযরত মাওলানা বশীর আহমদ শায়খে বাঘা রাহ.
৩. রাজাগঞ্জ ইসলামিয়া মাদরাসা, কানাইঘাট, সিলেট।
হযরত মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া রাহ.
৪. রেঙ্গা তওক্কুলিয়া মাদরাসা, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।
(ক)হযরত মাওলানা বদরুল আলম শায়খে রেঙ্গা রাহ.
(খ)হযরত মাওলানা আরফান আলী রাহ.
৫. বারকোট আহমদিয়া মাদরাসা, গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
হযরত মাওলানা আব্দুল লতীফ রাহ.
৬. হামছাপুর রশিদপুর মাদরাসা, বালাগঞ্জ, সিলেট।
(ক) হযরত মাওলানা মুকররম আলী রশিদপুরী রাহ.
(খ) হযরত মাওলানা কারী আব্দুল হামীদ হামছাপুরী রাহ.
৭. মৌলভী বাজার দারুল উলূম মাদরাসা, মৌলভীবাজার।
(ক) হযরত মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, মুহাদ্দিস, ফাযিলপুরী ভানুগাছী রাহ.
(খ) হযরত মাওলানা আব্দুন নূর ইন্দেশ্বরী রাহ.
(গ) হযরত মাওলানা খলিলুর রহমান দাসপাড়ী রাহ.
(ঘ) হযরত মাওলনা মুজম্মিল আলী দাসপাড়ী রাহ.
৮. রায়পুর মোবারকপুর মাদরাসা, মৌলভী বাজার।
(ক)হযরত মাওলানা হাবীবুর রহমান শায়খে রায়পুরী রাহ.
(খ)হযরত মাওলানা উবায়দুল্লাহ কুমিল্লা রাহ.
৯. বাহুবল ইসলামিয়া মাদরাসা, হবিগঞ্জ।
হযরত মাওলানা আবুল হাশিম রাহ.
১০. সৈয়দপুর হুসাইনিয়া মাদরাসা, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।
* হযরত মাওলানা আব্দুল খালিক শায়খে সৈয়দপুরী রাহ.
১১. হাসনাবাদ মাদরাসা, ছাতক, সুনামগঞ্জ।
* হযরত মাওলানা মুজফ্ফর হাসান হাসনাবাদী রাহ.<
আল্লাহপাকের ফযল ও করমে নবগঠিত এ বোর্ডটির কার্যক্রম এত দ্রুত বেগে অগ্রসর হতে থাকে যে, মাত্র চার, পাঁচ বছরের মধ্যেই শিলচর, হাইলকান্দী, করিমগঞ্জসহ সিলেটের সকল মহকুমায় বোর্ডের কর্মপরিধি বিস্তার লাভ করে। ফলে মোট ৭০টি মাদরাসা আযাদ দ্বীনী তা’লীমী এদারাভুক্ত হয়ে যায়। এ সময় যথারীতি নেসাব ও নেযাম প্রস্তুত করে মাদরাসাসমূহে জারি করা হয়, সাথে সাথে সংযুক্ত মাদরাসাসমূহের পরিদর্শন, চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণ এবং বৃত্তি ও সনদ প্রদানের কাজ ও সমভাবে চলতে থাকে।
ভারত বিভাগের পূর্বে অধুনা ওসমানী নগর থানার গাভুরটেকি গ্রামে এদারার ১ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তারপর ২য় অধিবেশন হয় রানাপিং হুসাইনিয়া আরাবিয়া মাদরাসায়। অতঃপর কাছাড় জেলার পাথারকান্দি থানাধীন হাটখোলা গ্রামে এদারার তৃতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ৪র্থ অধিবেশন করিমগঞ্জে এবং ৫ম অধিবেশন গোলাপগঞ্জ থানাধীন বাঘা মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয়।